শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:১৮ অপরাহ্ন

বড় হচ্ছে দেশীয় অ্যাপসের বাজার, নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে চ্যাটবট

প্রযুক্তি ডেস্ক::

কোনও পরিকল্পনা বা নীতিমালা ছাড়াই নীরবে বড় হচ্ছে দেশীয় অ্যাপের বাজার। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দুই উদ্যোগেই তৈরি এসব অ্যাপসের বাজার এরই মধ্যে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট (টেক্সট বা অডিওভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম। যা গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে)। নতুন ধারার এই কম্পিউটার প্রোগ্রাম এরই মধ্যে দেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এমসিসি লিমিটেড, প্রেনিউর ল্যাব অ্যাপসের পাশাপাশি চ্যাটবটও তৈরি হচ্ছে। দেশে অনেক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ফলে সম্ভাবনাময় এই প্রযুক্তি সেবার নতুন বাজার তৈরি করছে চ্যাটবট।

এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অ্যাপস তৈরির সময় দেশের মানুষকে টার্গেট করতে হবে, অগ্রগণ্য ভাবতে হবে। দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ এখন স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ফলে এই দেশই এখন বিশাল একটা বাজার।’

তিনি জানান, অ্যাপস তৈরির আগে মানুষের চাহিদা বুঝতে হবে। বুঝতে হবে কিসে মানুষের কল্যাণ হবে। এসব ভেবে অ্যাপস তৈরি করলে সেগুলো জনপ্রিয়তা পাবে।

অ্যাপস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এস এম আশ্রাফ আবীর বলেন, ‘বাংলাদেশে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপসের যাত্রা শুরু হয়েছে কিছুদিন হলো। এটার বিকাশ পর্ব চলছে এখন। বাংলা ভাষায়ও অ্যাপ বানানো শুরু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘থ্রিজির পরে ফোরজি চালু হয়েছে। এখন দেশীয় অ্যাপ ও কনটেন্টের চাহিদা বাড়ছে। বাজারও বড় হচ্ছে। যে গতিতে আমাদের ডেভেলপাররা উঠে আসছে তাতে অ্যাপসের বিলিয়ন ডলারের স্থানীয় বাজার তৈরি হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’

তিনি জানান, দেশের কিছু কিছু অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান খুব ভালো করছে। রাইজআপ ল্যাবসের তৈরি ‘ট্যাপ ট্যাপ’ অ্যাপ বিশ্ব মাতাচ্ছে। এমসিসির তৈরি মীনা কার্টুন খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। প্লেস্টোর থেকে আমাদের ডেভেলপাররা অ্যাপ বিক্রি করতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আশ্রাফ আবীর বলেন, ‘করতে পারে তবে মোবাইল অপারেটরগুলোর বিলিং কানেক্টেড নয় গুগুল বা অ্যাপলে। এটা একটা সমস্যা।’

জানা গেছে, সফটওয়্যার ও সেবা পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বেসিসের সদস্য শতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা অ্যাপ তৈরি করে। এই সংখ্যা ৩০০-৪০০ না হলে দেশের অ্যাপের বাজার সুসংহত হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের আইসিটি বিভাগের তৈরি অ্যাপগুলোর (৫০০ অ্যাপ) মধ্যে কিছু অ্যাপ ভালো করেছে। এগুলোর আরও প্রচার হলে বেশি বেশি ডাউনলোড হতো অ্যাপ স্টোর থেকে।

দেশ তথ্য-প্রযুক্তির গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আরিফ নিজামী বলেন, ‘অ্যাপসের বাজার অনেক বদলে গেছে। তাই এর বাজার আকারটা বর্তমানে সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিতর্কও হচ্ছে এটা নিয়ে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘উবারকে কি অ্যাপস মার্কেটে অন্তর্ভুক্ত করবেন নাকি রাইড শেয়ারিং, নাকি ট্যাক্সি হিসেবে ধরবেন? একই কথা বলা যায় ই-কমার্সভিত্তিক অ্যাপসগুলোর ক্ষেত্রে। অ্যাপসের প্রকৃত বাজার যদি বলতে হয় তাহলে গেমসের মার্কেটটাই এখন ভালোভাবে আছে।’

তিনি মনে করেন, চ্যাটবট অ্যাপসের খেলাটা বদলে দিয়েছে।

তাদের প্রতিষ্ঠান দেশের অন্যতম শীর্ষ চ্যাটবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। টেলিকম প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, ই-কমার্স, গণমাধ্যমসহ বাংলা, বাংলিশ (বাংলা+ইংরেজি) ও ইংরেজি বুঝতে পারে এম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সভিত্তিক চ্যাটবট তৈরি করছে গত ২ বছর ধরে।

অ্যাপস নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ২০১৭ সালে দেশে অ্যাপের বাজার ছিল ৫০০ কোটি টাকার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০০ কোটি টাকায়। বর্তমানে তা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

স্টাটিসটার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত প্লেস্টোরে ৩৩ লাখ অ্যাপ রয়েছে। অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর রয়েছে ২৪ লাখ অ্যাপ। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপগুলোর মধ্যে বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে টুলস, কমিউনিকেশন, ভিডিও প্লেয়ার্স অ্যান্ড এডিট, ভ্রমণ ও স্থানীয় বিভিন্ন অ্যাপ। আইওএসের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইউটিলিটিস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ছবি, ভিডিও ও গেমভিত্তিক অ্যাপ।

অ্যাপস জিনি পোর্টাল জানাচ্ছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্লে-স্টোরগুলোয় বাংলাদেশের ডেভেলপারদের তৈরি অ্যাপ ছিল ৩ লাখ। যদিও বর্তমানে তা বেড়েছে বলে জানা গেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com